বিদায়ী বছরে চট্টগ্রামে বিদেশযাত্রা বেড়েছে তিনগুণ
০৪ জানুয়ারি, ২০২২, 7:03 PM
NL24 News
০৪ জানুয়ারি, ২০২২, 7:03 PM
বিদায়ী বছরে চট্টগ্রামে বিদেশযাত্রা বেড়েছে তিনগুণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
মহামারির ধকল কাটিয়ে গেল বছরে চট্টগ্রাম থেকে বেড়েছে প্রবাসীদের বিদেশযাত্রা। আগের বছরের চেয়ে ওই বছরটিতে চট্টগ্রাম ছেড়েছেন প্রায় তিনগুণ বেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরব। এর পরের অবস্থান আরব আমিরাতের হওয়ার কথা থাকলেও তা দখল করে নিয়েছে ওমান। যদিও গত দুমাসেরও বেশি সময় ধরে গুনতে হচ্ছে বাড়তি বিমান ভাড়া। তবুও জীবিকার তাগিদে দেশ ছাড়ছেন প্রবাসীরা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে বেশি লোক পাড়ি জমান সৌদি আরব, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম থেকে বিদেশগামীর সংখ্যা ছিল প্রায় দুই লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। ২০২১ সালে তা প্রায় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ছয় লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জনে। এর মধ্যে সৌদি আরবে চার লাখ ৫৭ হাজার, ওমানে ৫৫ হাজার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৯ হাজার ২০২ জন পাড়ি জমান।
২০২১ সালের করোনার চিত্র বলছে, বছরটির প্রথম দিনে দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৯৯০ জনের। মৃত্যু হয়েছিল ১৭ জনের। এর পর থেকেই ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে শনাক্তের সংখ্যা। তবে বছরের মাঝামাঝি জুন-জুলাই মাসে এসে ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে করোনা। বাড়তে শুরু করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ওই পরিস্থিতিতে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল করা হয় লকডাউন। এর পর আটদিন বিরতি দিয়ে আবারো দেয়া হয় ১৪ দিনের লকডাউন। পরবর্তীতে তা বেড়ে পৌঁছায় ১০ আগস্ট পর্যন্ত। ফলে ওই সময়ে তুলনামূলক কমে যায় প্রবাসীদের বিদেশযাত্রার পরিমাণ। তবে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এ ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রবাসী জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রাম ছাড়েন।
জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বুরোর তথ্যমতে, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরব, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়াও সিঙ্গাপুরে ২৭ হাজার ৮৭৫, জর্দানে ১৩ হাজার ৮১৬, কাতারে ১১ হাজার ১৫৮, কুয়েতে এক হাজার ৮৪৮, ইতালিতে ৬৫৩, লেবাননে ২৩৫, মরিশাসে ২১৫, যুক্তরাজ্যে ১২৩, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০৮, সুদানে ৩৯, মালয়েশিয়ায় ২৮, ব্রুণাইয়ে ১২, বাহরাইনে ১১, ইরাকে পাঁচ, লিবিয়ায় তিন ও জাপানে তিনজন পাড়ি জমান। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমান সাত হাজার ৭১১ জন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে চট্টগ্রামে আটকে পড়া প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন। প্রতিদিনই চট্টগ্রাম থেকে জীবিকার তাগিদে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ থেকে বিমান ভাড়া চারগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। যেখানে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকায় আরব আমিরাত ও ৪০ হাজার টাকায় সৌদি আরব যাওয়া যায়, সেখানে বাংলাদেশ থেকে গুনতে হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দেশের কল্যাণে প্রবাসীদের অবদান আছে। অথচ এসব ক্ষেত্রে প্রবাসীরা অবহেলিত। বিষয়টি প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত বেদনার।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সচিব ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল বলেন, প্রবাসীরা আমাদের দেশের সম্পদ। তারা যেন বৈধ এজেন্সির মাধ্যমে কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার না হন, এ ব্যাপারে বায়রা বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে নারীদের উদ্দেশ্যে বলবো- দালালের খপ্পড়ে না পড়ে বায়রার নিবন্ধিত এজেন্সির মাধ্যমে প্রবাসে গেলে প্রতারণার শিকার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মালয়েশিয়া সফর করেন। সেখানে আমাদের সরকারের সঙ্গে মালয়েশিয়ার জি টু জি চুক্তি হয়। এটির মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকদের সহজেই মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের আরো বেশি উন্নয়ন ঘটবে।