শ্রীমঙ্গলে হেলাল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনারস বাগান দখলের অভিযোগ
মনিরুল ইসলাম
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, 9:51 PM
মনিরুল ইসলাম
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, 9:51 PM
শ্রীমঙ্গলে হেলাল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনারস বাগান দখলের অভিযোগ
শ্রীমঙ্গলে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জোর পুর্বক আনারস বাগান দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্রীমঙ্গল শহরের বিটিআরআই এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র মো. আবু তাহের মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) শ্রীমঙ্গল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। শহরের জালালিয়া সড়কের সৈয়দ চৌধুরীর পুত্র ও উপজেলার উত্তরসুর এলাকার সখিনা সিএনজি রিফুয়েলিং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের মালিক শের আলী চৌধুরী হেলাল এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মো. আবু তাহের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার বালিশিরা মৌজার দাগ নং এসএ-১৪, ১৫, ১৬, ১৩, জেএল নং-৭১/১০৮, খতিয়ান নং-২৪, ৫৯, ৭৯-এ ৬নং আশীদ্রোন ইউনিয়নের বেগুনবাড়ি এলাকায় আমার পরিবারের পাট্টা রকম ৬ একর সোয়া ৭১ শতাংশ ভূমি এবং নির্মল ঘোষ, তাপস ঘোষগং হতে লিজ নেয়া খাস খতিয়ানের ৬৫ শতক ভূমিতে লেবু, আনারস ইত্যাদি ফসল ফলিয়ে পরিবারের ভরন-পোষনসহ খরচাদি নির্বাহ করে আসা অবস্থায় ২০২৩ সালের ২১ মে আমাদের পাশের ভূমির মালিক মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দন গ্রামের মৃত আব্দুছ ছত্তারের কন্যা লুৎফুন নাহার, নিলুফা বেগম, পুত্র আবুল খায়ের ও আবুল ফয়েজের কাছ থেকে ১০ এক ৬৫ শতক বাগান রকম সাইল, চারা, বাগান ও আনারস বাগানের ভূমি ক্রয় করেন শ্রীমঙ্গল শহরের জালালিয়া সড়কের সৈয়দ চৌধুরীর পুত্র ও উপজেলার উত্তরসুর এলাকার সখিনা সিএনজি রিফুয়েলিং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের মালিক মো. শের আলী চৌধুরী হেলালসহ ১১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। হেলাল চৌধুরীর সাথে যারা ওই জমি ক্রয় করেন তারা হলেন হবিগঞ্জের কোর্ট স্টেশন সড়কের মো. ফজলুর রহমান চৌধুরীর স্ত্রী মোছা. লুৎফুন নেছা চৌধুরী, মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার মো. আব্দুল কাদির হাওলাদারের কন্যা দিল আফরোজ, নারায়নগঞ্জ সদরের ফজলুল হকের পুত্র জাহিদুল হক, খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার মো. আব্দুস সাত্তার খানের পুত্র মো. সাইফুল মোমেন, শ্রীমঙ্গলের হাজী আছদ্দর আলী সড়কের মুজিবুর রহমানের পুত্র সাইফুর রহমান সোয়েব, একই উপজেলার সোনা মিয়া রোডের মো. আব্দুল কাদিরের পুত্র জাকির হোসেন, হবিগঞ্জ সদরের শায়েস্তানগর এলাকার মৃত আব্দুল কাদিরের পুত্র আব্দুল জলিল এবং শের আলী চৌধুরী হেলালের স্ত্রী ফাহমিদা করিম রিয়া। দলিলে যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ১৯ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। আদতে এ ভূমির বাজার মূল্য এর থেকে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি'।
আবু তাহের বলেন, শের আলী চৌধুরী হেলালের নেতৃত্বে ১১ জন ওই ভূমি ক্রয় করার পর আমাদের জীবনে নেমে আসে অমানিসার অন্ধকার। তারা ওই ভূমিটি ক্রয় করার পর আমাদের নামে দীর্ঘদিন যাবত লিজকৃত ও আমাদের কর্তৃক আবাদকৃত নির্মল ঘোষ, তাপস ঘোষগং থেকে লিজ নেয়া খাস খতিয়ানের জমি শের আলী চৌধুরী হেলাল গং জোরপূর্বক দখল করে নেন। একই সাথে আমাদের পাট্টা জমিও দখলের চেষ্টা করতে থাকেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ নিয়ে আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে শালিস-বিচার অনুষ্ঠিত হয়। সম্মানিত ইউপি চেয়ারম্যানের বিচার না মেনে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমদ বিচার করে দেবার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেন। তার বিচার মানতে আমাদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। এরপর আমি বিচারের জন্য ফয়েজ আহমদের দ্বারস্থ হই বারবার। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উপরন্ত গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের পাট্টা রকম জমির (শ্রীমঙ্গল উপজেলার বালিশিরা মৌজার দাগ নং এসএ-১৪, ১৫, ১৬, ১৩, জেএল নং-৭১/১০৮, খতিয়ান নং-২৪, ৫৯, ৭৯) কিছু অংশ সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা দখল করে নেয়। এ দখলের সময় উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমদ, সাবেক ইউপি মেম্বার ফরিদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন'।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যারা বিচারের দায়িত্ব নিলেন তারাই দখল প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেন! কি আশ্চর্য!
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের নামে১০ বছরের লিজ নেয়া ছিল। এখনো লিজের ৫ বছর বাকি রয়েছে। আমাদের পাট্টার জমির সাথে ওই জমি লিজ নিয়ে ফসল আবাদ করে আসছি। আমাদের লিজ ৫ বছর থাকার পরও এটি দখল করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের পাট্টার কিছু জমিও তারা দখলে নিয়েছে। জমি দখল কারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এতোদিন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে সাহস পাইনি'। তিনি বলেন ' শের আলী হেলাল চৌধুরী মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে তার সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় আমরা ভয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের মনে কিছুটা সাহসের সঞ্চার হয়েছে, বিধায় আপনাদের মাধ্যমে আমাদের জমি ফেরত পাবার প্রত্যাশা করছি'। আবু তাহের বলেন, 'আমাদের কতটুকু পাট্টার জমি ওই গংয়ের দখলে রয়েছে তা এখনো জানি না। কারণ প্রাণের ভয়ে আমরা আমাদের জমির প্রকৃত পরিমাপ করতে পারিনি। এখনো আমাদের আবাদকৃত বাগানে আমরা যেতে ভয় পাচ্ছি' বলে আশংকা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ের সত্যতা জানার জন্য সাংবাদিকের পক্ষ থেকে শের আলী চৌধুরী হেলালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।