ঢাকা ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
সেরা ফ্রিল্যান্সারের স্বীকৃতি পেল ওসমানীনগরের শিক্ষার্থী জাহেদ বড়লেখার সীমান্তে পড়েছিল চা শ্রমিকের গুলিবিদ্ধ নিতর দেহ পিএসিতে "গোল্ডেন এ প্লাস" বড় হয়ে জাষ্ঠিস হতে চায় সালমান সংবাদ সম্মেলন প্রবাসীর সম্পত্তি দখল করতে পুলিশ ও বহিরাগতদের দিয়ে হয়রানি ওসমানীনগরে বিএনপি নেতা লিলফর বহিষ্কার আলীপুর নূরানি একাডেমির অসাধারণ সাফল্য জুড়ীতে প্রবাসী সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টোকে সংবর্ধনা রাজনগরে ঊষা কে,জি স্কুলে মহান বিজয় দিবস পালিত তাহিরপুরে মহান বিজয় দিবসকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের মিছিল নানা আয়োজনে ওসমানীনগরে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

একটি হারিয়ে যাওয়া বাজারের গল্প : ইসলামগঞ্জ বাজার

#

বার্তা সম্পাদক

০৭ জুন, ২০২৩,  8:44 AM

news image
ছবি : মারজান আহমদ

মারজান আহমদ ।।   দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি হাওরের দক্ষিনপাশে অবস্থিত ভাটি অঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী হাট বাজারের নাম ইসলামগঞ্জ বাজার। কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল উইনিয়নের মুসলিম অধ্যুষিত এরিয়ায় গড়ে উঠা এই বাজারের নামকরনের বিষয়ে তেমন কোন তথ্য না জানলেও ইসলামিক নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হয়ত এর নামকরন করা হয় ইসলামগঞ্জ বাজার। আঠারো শতকের প্রতিষ্ঠত এই বাজারটি দীর্ঘ প্রায় দুইশতাব্দি স্বগৌরভে দাড়িয়ে ছিল তার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে এবং প্রতিদিন গ্রাম্য লোকদের এক মিলন মেলা বসতো সেখানে। হাওর পাড়ের মানুষের জীবন বৈচিত্রের অনেক ইতিহাস এই বাজারকে ঘিরে। এখানে প্রতি রবি ও বুধবারে বসতো সাপ্তাহিক হাট, বাজারে কিছু স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট বসতো। স্থায়ী দোকানগুলোতে হাটের দিন ছাড়াও জিনিসপত্র পাওয়া যেত। অস্থায়ী দোকানগুলো শুধুমাত্র সাপ্তাহিক হাটে বসতো। বাজারে অবস্থিত বেশিরভাগ দোকান ছিল বাশ ও ছনের তৈরী দু'চারটা পাকা ঘর সহ টিনের ছাউনির ঘরও ছিলো। স্থায়ী অস্থায়ী দোকানের পাশা পাশি বাজারে ছিলো একটি মসজিদ, একটি ডাকঘর, দুটি রাইস মিল,পাঠাগার,দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি এ ছাড়াও বাঁশ, কাঠ, ছনসহ গ্রামীন হস্ত শিল্পের তৈরী নানা রকম জিনিস ছিলো বাজারের নিত্য নতুন পণ্য।

বাজারের মাঝখানে একটি বিশাল বট বৃক্ষ ছিলো যা ছাতার মতো দুপুরের ঝাঝালো রোদ,স্বল্প বৃষ্টি থেকে বাজারের মানুষদের আলগে রাখত। বাজারটি হাওর পাড়ে অবস্থিত থাকায় এখানে একটি গরুর খোয়ার ছিলো এতে প্রায়ই দু'চারটি গরু-ছাগল ক্ষুধার তাড়নায় আকাশ ফাটানো চিৎকার করতে দেখা যেত। দেখা যেত হাটের দিন অস্থায়ী দোকানদারেরা বিকেল দুটো থেকেই তাদের যার যার নির্দিষ্ট উচু জায়গায় বিক্রিয় জনিত পণ্য সাজাতে থাকতো। বাজারের স্থায়ী দোকারদারেরাও অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি মাল দ্বারা নিজ নিজ দোকান সাজিয়ে রাখতো। বিকেল ৪টা হতে ৫ টা পর্যন্ত হাটের চারিদিকের রাস্তাগুলো দিয়ে পায়ে হেটে বন্যার পানির মত শত শত লোক আসতে থাকতো। বংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির পাড়ে অবস্থিত থাকায় এ বাজারের সৌন্দর্য্যের কোন কমতি ছিলো না। বাজারটি বছরে দু'টি মৌসুম অতিবাহিত করতো, শুক্ন ও বর্ষা মৌসুম। শুক্ন মৌসুমে বাজারটি হাওরের বিশাল মাঠের মধ্যখানে অবস্থিত থাকায় এ বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ফুটবল খেলার মাঠগুলো কানায় কানায় দর্শকপূর্ন থাকতো, তা ছাড়া হাওরের সবুজ ঘাস আর মাঠ ভরা ধানক্ষেতে বাজারটির সৌন্দর্য্য দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলতো, আবার বর্ষা মৌসুমে যখন সমস্ত হাওর অথৈ পানিতে থৈ থৈ করতো তখন বাজারটি রুপ বদলিয়ে অন্য রুপে নিজেকে উপস্থাপন করতো, দুর থেকে বাজারের প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যেত বিশাল সাগরের মধ্যে জেগে ওঠা একটি দ্বীপের খন্ড, যার চর্তুর পাশে বড় বড় ঢেউ আর পানির কলকলানী শব্দ বয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বাজারে আসার একমাত্র বাহন ছিলো নৌকা, প্রতিদিন মানুষজন নৌকা দ্বারা বাজারে আসা যাওয়া করতেন এবং সাপ্তাহিক হাটে দূর দুরান্ত থেকে নৌকা দিয়ে শত শত লোক বাজারে আসতেন। তখকার সময় সত্যি এক মনোরঞ্জকর দৃশ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটতো।

গ্রাম্য এই হাট গ্রামীন জীবনের একটি বিশেষ ভূমিকা বহন করে আসছিলো। গ্রামের নিরিহ জনগন এ বাজার থেকে তাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতো। যখন মোবাইল টেলিফোনের ব্যবহার কম ছিল, তখনকার সময়ে এই এলাকার মানুষজন দেশ-বিদেশে অবস্থানরত তাদের আত্নীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগর এক মাত্র মাধ্যম ছিলো পোষ্ট অফিস। বাজারের এই পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে চিটি-পত্র আদান প্রদান করা হত, আস্তে আস্তে মোবাইল ফোনের ব্যবহার যখন বড়ল তখন চিটি-পত্র আদান প্রদানও কমে গেল, কিন্তু রয়ে গেল পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে চাকরির আবেদন পাঠানো এবং পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাওয়ার বিষয়টি। দেখা গেছে বাজারের কার্যক্রম যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন ডাকঘরও আর খোলা হচ্ছে না ফলে চাকরির পরীক্ষায় অশংগ্রহনে আগ্রহী প্রার্থীরা নির্দিষ্ট সময় তাদের প্রবেশপত্র পেতে দেরী হচ্ছে। অনেক প্রার্থীর এমন অভিযোগও আছে চাকরির পরীক্ষা অনুষ্টিত হওয়ার ৪/৫ দিন পরে প্রবেশপথ হাতে পেয়েছেন। যে বাজারটিতে আগে সবধরনেরর কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা হতো বর্তমানে প্রায় দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে বাজরটি নিরব নিঃশব্দ অবস্থায় পড়ে আছে, নেই আগের মতো কোন দোকানপাট, মানুষের সমাগম, হৈচৈ আর কোলাহল।

একটি মসজিদ, অবহেলায় পড়ে থাকা একটি পোষ্ট অফিস, পুরাতন বাঙ্গা ঘর আর অতিথের সেই বট বৃক্ষ নিয়ে ভূতুরে বাড়ির মতো এখনও দাড়িয়ে আছে বাজারটি তবে নেই কোন ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম।

দীর্ঘ প্রায় দুই শতাব্দী পরে বাজার হারালো তার অতিথ ঐতিহ্য, সরকার বঞ্চিত হলো রাজস্ব আয় থেকে। আর এলাকার মানুষ বঞ্চিত হলো বাজারের সুযোগ সুবিধা ভোগকরা থেকে।এলাকার মানুষ এখনো চায় সেই বাজারটি চালু করা হোক।


প্রতিবেদন : M A Malik Chowdhury  

তথ্য সহযোগীতায় : Misbah Uddin

ছবি :  Marzan Ahmad  (বার্তা সম্পাদক)  সিলেট বিডি নিউজ২৪.লাইভ

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মনিরুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : মারজান আহমেদ