জুড়ীতে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও জোহরা দম্পতি
নিজস্ব প্রতিনিধি
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 3:56 PM
নিজস্ব প্রতিনিধি
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 3:56 PM
জুড়ীতে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও জোহরা দম্পতি
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে মানুষের কাছ থেকে নানা বাহানায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন জোহরা দম্পতি। উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন এ দম্পতি। এ নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। টাকা নিয়ে উধাও হওয়া দম্পতির বাড়ী একই গ্রামে।
স্থানীয় ভোক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, জোহরা বেগম ও মোহাম্মদ আলী দম্পতির এক ছেলে প্রবাসে ও আরেক ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরি করছে। এক ছেলেকে প্রবাসে অন্য ছেলেকে সেনাবাহিনীতে চাকুরির জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন জানান দিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে। কারো কাছ থেকে ধার, আবার কারো কাছ থেকে কিস্তি পরিশোধ করার শর্তে বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু ধার ও উত্তোলন করা টাকা পরিশোধ না করেই একপর্যায়ে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে ঐ দম্পতি পালিয়ে যান।
গ্রামের তৈয়ব আলী (৫৫) বলেন, আমার কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার ও কিস্তি তুলে নিয়েছে ১ লক্ষ টাকা। টাকা পরিশোধ করার জন্য বললে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়।
মোঃ মিজানুর রহমান (৭০) বলেন, দুই ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করে দেই। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বর্তমানে কিস্তি পরিশোধ করার জন্য আমার বাড়ি ছাড়ছেন না। এ কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে আমি এখন বাড়ি ছাড়া।
অঞ্জনা রানী দাস (৩৫) জানান, কিস্তি চালাবে বলে আমাকে দিয়ে এনজিও থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। বর্তমানে তারা টাকা পরিশোধ না করে পালিয়ে যাওয়ায় আমার সংসার টিকানো দায় হয়ে পড়েছে।
রেজিয়া বেগম (৩০) জানান, আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ছেলের সেনাবাহিনীতে চাকুরির জন্য ধার নিয়ে আর ফেরত দেয়নি।
মোঃ আক্কাস আলী (৫০) বলেন, আমিসহ আমাদের গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষের কাছ থেকে এ দম্পতি ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে তারা উধাও হয়েছে। এ নিয়ে গ্রামের সকলে মিলে তাদেরকে পাকড়াও করলে ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বেতন ভাতা পেয়ে সবার পাওনা পরিশোধ করবেন বলে সময় নেয়। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করেই রাতের আধারে রাতের আধারে তারা পালিয়ে যায়।
সরজমিনে, জোহরা ও মোহাম্মদ আলী দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাদের ঘরে তালা ঝুলছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের দুই শতাধিক নারী পুরুষ সেখানে জড়ো হন এবং তাদের সাথে প্রতারণার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনিও তাদের কথাগুলো শুনেন। ভুক্তভোগীরা এই বিষয়টির আশু সমাধানের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি আগেই অবগত হয়েছি। জোহরা অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির মহিলা। সে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমি যোগাযোগ করে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করব।
প্রতারণার বিষয়টি জানতে এ দম্পতিকে ফোন দিলে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।